হোমিওপ্যাথিক লিভার রোগের চিকিৎসা

হোমিওপ্যাথিক লিভার রোগের চিকিৎসা

লিভার হল শরীরের সবচেয়ে বড় গ্রন্থি যা পেটের ডানদিকে ডায়াফ্রামের নীচে অবস্থিত এবং শরীরের জন্য অনেকগুলি গুরুত্বপূর্ণ কাজ করে। এটি শরীরে যাওয়ার আগে পরিপাকতন্ত্র থেকে আসা রক্তকে ফিল্টার করে। লিভারের অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ কাজ হল শরীরে কার্বোহাইড্রেট, প্রোটিন, লিপিড এবং অ্যামিনো অ্যাসিডের বিপাক; পিত্তের উৎপাদন যা চর্বি ভাঙতে সাহায্য করে এবং রাসায়নিক ও ওষুধের ডিটক্সিফিকেশন করে। এর অন্যান্য কাজগুলির মধ্যে রয়েছে রক্ত ​​জমাট বাঁধার কারণ তৈরি করা, গ্লুকোজ সঞ্চয় করা এবং বিলিরুবিনের সিঃসরণ করে। অনেক কারণই লিভারের সমস্যার কারণ হতে পারে, তবে তাদের মধ্যে প্রধান হল ভাইরাস সংক্রমণ, অ্যালকোহল সেবন এবং স্থূলতা। 

লিভারের সমস্যা সব বয়সের মানুষের মধ্যে হতে পারে এবং জেনেটিক হতে পারে। লিভারের সমস্যা, যদি সময়মতো চিকিৎসা না করা হয়, তাহলে লিভার ফেইলিওর হতে পারে এবং জীবনের জন্য হুমকি হয়ে দাঁড়াতে পারে।

পেটের ডানদিকে পাঁজরের নিচে এই পীড়া জন্মিয়া থাকে। ঐ স্থানে টিপিলে হাতে লাগে। স্বল্প বিরাম, ম্যালেরিয়া প্রভৃতি জ্বর কুইনাইন সেবন, বাতগ্রস্থ রোগী, স্ত্রীলোকদের ঋতু বন্ধ হইয়া এই পীড়া হয়। অধিক পরিমাণে মাছ, মাংস, ঘৃত, তৈলাক্ত দ্রব্য আহার, অজীর্ণ প্রভৃতি নানাবিধ কারণে এই পীড়া হইতে পারে।

হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসা

হোমিওপ্যাথি নিরাময়ের বিজ্ঞান যা তীব্র এবং দীর্ঘস্থায়ী লিভারের উভয় সমস্যার চিকিৎসায় অত্যন্ত কার্যকর। হোমিওপ্যাথি নিরাময়ের জন্য একটি সামগ্রিক পদ্ধতি গ্রহণ করে। হোমিওপ্যাথিক ওষুধগুলি গভীর কাজ করে এবং শরীরের উপর কোন পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া নেই। প্রচলিত চিকিৎসা পদ্ধতির বিপরীতে, হোমিওপ্যাথিক ওষুধগুলি রোগ এবং এর লক্ষণগুলিকে দমন করে না। প্রকৃতপক্ষে, তারা রোগটিকে মূলে আক্রমণ করে এবং শরীরের নিজস্ব পুনরুদ্ধার প্রক্রিয়াগুলি বন্ধ করে দেয়, যা রোগটিকে সম্পূর্ণরূপে নির্মূল করতে যথেষ্ট শক্তিশালী করে তোলে। রোগের প্রক্রিয়াকে দমন করলে এটি একগুঁয়ে হয়ে যায়। একবার শরীরের নিজস্ব ইমিউন সিস্টেম শক্তিশালী হয়ে গেলে, এটি রোগের আরও পূর্নরাবৃত্তি প্রতিরোধ করে।

ব্রাইওনিয়া এলব(Bryonia Alb): লিভারের স্থানে সুঁচ ফোঁটানো ব্যথা, জ্বালা, চাপ দিলে নড়াচড়া করিলে কিংবা কাশিলে বেদনার বৃদ্ধি, শুষ্ক কঠিন মল, ডান কাঁদের ব্যাথা, মুখে তিক্ত আস্বাদ প্রভৃতি লক্ষণে ইহা উপকারী।

সেবন বিধিঃ শক্তি ৩০ বা ২০০ দিনে দুইমাত্রা সেব্য। ইহার মাদার টিংচার একভাগ, নয়ভাগ অলিভওয়েল মিশ্রিত করিয়া লিভার স্থানে বাহ্যিক প্রয়োগ বিধেয়।

মার্কুরিয়াস সল (Merc Sol):—যকৃত প্রদাহে উৎকৃষ্ট ঔষধ। নরম থল থলে জিহ্বা, সাদা আলায়ক্ত জিহ্বায় দাঁতের দাগ, নিঃশ্বাসে দুর্গন্ধ। হাসিলে বা কাশিলে লিভারের বেদনা। ডান পার্শে শয়নে অক্ষমতা কখনাে কোষ্ঠবদ্ধ কখনাে সবুজ বা হলদে রঙের তরল মল। ইহা বাইওনিয়ার সহিত পর্যায়ক্রমে ব্যবহারে যথেষ্ট উপকার হয়। একদিন ব্রাইওনিয়া পর দিন। মার্কুরিয়াস এইভাবে পর্যায়ক্রমে ব্যবস্থা।

সেবন বিধিঃ – শক্তি 30 বা 200 সকাল বিকাল দুইবার।

চেলিডােনিয়ম (Cheledonium):—ডান কাঁধের নিচে বেদনা, মুখে তিক্ত আস্বাদ। জিহ্বায় হরিদ্রা বর্ণের ময়লা, চোখ মুখ হলুদ বর্ণ, মাটির কিংবা গন্ধকের ন্যায় হলুদ বর্ণের পায়খানা ক্ষুধা হীনতা গা বমি বমি মাঝে মাঝে পিত্ত বমি। গরম খাবারের আকাঙ্খ ইত্যাদি লক্ষণে ইহা উপকারী।

সেবন বিধিঃ– শক্তি Q৪ ফোঁটা অর্ধ ছটাক জলের সহিত প্রত্যহ ৩/৪ বার।

ম্যাগনেশিয়া মিউর (Magnesia Mur):—লিভার বেদনা ও ফোলা ডানদিকে চাপিয়া শুইতে অপারগতা। জিহ্বায় হলুদ ময়লা, নিশ্বাসে দুর্গন্ধ, স্বল্প মূত্র, কোষ্ঠ বদ্ধ, গুটলে মল, মাঝে মাঝে টক বমি, শ্বাসকষ্ট বুক ধড়ফড়ানি লিভার প্রদেশে হাত ছোঁয়াইলে বেদনা বাড়ে। ইত্যাদি লক্ষণে ইহা উপকারী।

সেবন বিধিঃ– শক্তি 30 বা 200 সকাল বিকাল দুইবার।

কার্টুয়াস মেরি (Cardus Mare):—ইহা লিভার পীড়ায় একটি উৎকৃষ্ট ঔষধ। মুখ বিস্বাদ কিংবা তিক্ত আস্বাদ লিভারের স্থানে সুঁচ ফোটানাে বেদনা, নড়াচড়ায় বেদনার বৃদ্ধি। গা বমি বমি মাঝে মাঝে টক বা তিক্ত বমি। কোষ্ঠবদ্ধ মাঝে মাঝে উদরাময়, ডানদিকে চাপিয়া শুইতে পারে না। প্রস্রাব ঘােলা বা হলুদ, পরিমাণে অল্প।

সেবন বিধিঃ– শক্তি Q ৪ ফোঁটা সামান্য জলসহ দিনে চারমাত্রা।

লাইকোপােডিয়ম (Lycopodium): লিভারের স্থানে চিন্ চিনে ব্যথা, পেট ফাঁপে, ভুট ভাট। করে। পেট ভার বােধ, মুখের স্বাদ টক। পেটে ক্ষুধা, অল্প আহারে ক্ষুধা নিবৃতি, বিকাল ৪টা হইতে রাত ৮টায় সকল যন্ত্রণার বৃদ্ধি। গরম খাবারের ইচ্ছা কখনাে কোষ্ঠবদ্ধ কখনাে উদরাময় ইত্যাদি লক্ষণে ইহা অমােঘ ঔষধ।

সেবন বিধিঃ– শক্তি 30 বা 200 সকাল বিকাল দুইবার।

কোলেষ্টেরিনাম (Cholesterinum): লিভারে রক্ত সঞ্চয়। লিভার অত্যন্ত বড় প্রথমাবস্থায় বিশেষ কোনাে বেদনা থাকে না। দ্বিতীয় অবস্থায় জ্বালাযুক্ত বেদনা, হাটিবার সময় বেদনার জন্য হাত দিয়া চাপিয়া ধরে। ইহা লিভার ক্যানসারের উস্কৃষ্ট ঔষধ।

সেবন বিধিঃ – শক্তি 3x বিচূর্ণ চার পাঁচ গ্রেন মাত্রায় দিনে চারবার। 

বাইওকেমিক চিকিৎসা

ফেরাম ফস (Ferrum Phos):-লিভার পীড়ার প্রথমাবস্থায় জ্বর, লিভারে রক্ত সঞ্চয়, তিনি ব্যথায় ইহায় উপকারী। জিহ্বায় সাদা ময়লা চক্ষু হরিদ্রা বর্ণ, কোষ্ঠবদ্ধ দক্ষিণ স্কন্ধে বেদনা ইত্যাদি লক্ষণ দেখা গেলে উক্ত ঔষধের সঙ্গে ক্যালি মিউর পর্যায়ক্রমে সেবনে পকার হয়।

সেবন বিধিঃ– শক্তি 6x ২-৪ বড়ি একমাত্ৰা (বয়স অনুপাতে) দুইঘন্টা অন্তর। 

পথ্য ও আনুষঙ্গিক ব্যবস্থা

জ্বর অবস্থায় সাগু, বার্লী, এরারুট, সটির পাল ব্যবস্থা করিবে। মাছ, মাংস, ঘৃত পক্ক দ্রব্য ভোজন নিষিদ্ধ। অধিক পরিশ্রম, রাত্রি জাগরণ, দিবানিদ্রা মদ্রপান ক্ষতিকর, জ্বর না থাকিলে পুরাতন সরু চাউলের ভাত ছোলা, মুগ, মসুর ডাল, বেগুন পোড়া সুপথ্য। তিক্ত দ্রব্য আহার করা উপকারী। হালকা গরম জলে স্নান করা যাইতে পারে। লিভার প্রদাহে বাছুর, গরুর চোনা গরম করিয়া পশমি কাপড় ভিজাইয়া নিংডাইয়া ছেক দেওয়া ভাল।

শেয়ার করে ভালবাসা দেখান

Leave a Reply