আসল বসন্ত (SMALL Pox) ও হোমিওপ্যাথি

আসল বসন্ত (SMALL Pox):

বসন্ত রােগ যে জাতেরই হােক না কেন, খুবই ছোঁয়াচে। একজনের দেহ থেকে অন্যজনের দেহে খুব সহজেই রােগটা ছড়িয়ে পড়ে। অবশ্য যথাযথ সতর্কতা অবলম্বন করলে সে ভয় বিশেষ থাকে না।

রােগটাকে দুটি শ্রেণীতে ভাগ করা যায়—অসংযুক্ত এবং সংযুক্ত। বসন্তের গুটি বের হবার পর যদি দেখা যায় সেগুলাে আলাদা-আলাদাভাবে বেরিয়েছে তাহলে বলা হয় ‘অসংযুক্ত আর তা না হয়ে যদি কয়েকটা গুটি একসঙ্গে তাল পাকিয়ে বের হয় তাকে বলে ‘সংযুক্ত’ ‘অসংযুক্ত গুটিতে ভয়ের বিশেষ কারণ থাকে না। সেরেও যায় তাড়াতাড়ি। কিন্তু সংযুক্ত’ গুটি খুবই ভয়ের কারণ। এরকম গুটি বের হলে। রেগীকে ভুগতে হয় বেশী। রােগ সারতে অনেক সময় লাগে। প্রথমে জ্বর হয়, তারপর দু’তিনদিন বাদে গুটি বের হয়। গুটি বের হতে শুরু করলে জ্বরও ধীরে ধীরে কমতে থাকে। আরও ৩/৪ দিন পরে গুটিগুলােতে জল জমে ও পুঁজ হয়। তখন আবার জ্বর হতে শুরু করে। এ অবস্থায় জ্বর মাঝারি রকমের হতে পারে, আবার প্রচণ্ড রকমেরও হতে পারে। ৮/১০ দিন রােগভােগের পর গুটি শুকোতে আরম্ভ করে। তখন শুরু হয় চুলকানি। বসন্ত রােগে গুটির চেহারা দেখে ধরা যায়। কোন শ্রেণীর বসন্ত। 

আসল বসন্ত (SMALL Pox) ও হোমিওপ্যাথি এর চিকিৎসা:

  • সবেমাত্র রস জমলে—অ্যান্টিম-টার্ট ৩x।
  • রস জন্মাবার পর পুজ জন্মাতে শুরু করলে—মার্ক-সল ৬।
  • গুটি থেকে যদি রক্ত বের হয় ও রােগী অবসন্ন হয়ে পড়ে—ব্যাপ্টেসিয়া ৩x।
  • পিঠে বেদনা ও প্রবল জ্বর লক্ষণে—ভিরেট্রাম ভিরিডি ৩x।
  • গুটি বসে গেলে অর্থাৎ না বের হলে–জেলসিমিয়াম ১x।
  • গায়ে জ্বালা বােধ, সারা শরীর ঠাণ্ডা, অবসন্নতা বা নিঝুম মেরে পড়ে থাকা লক্ষণে—স্পিরিট ক্যামফার।
  • টীকা দেবার পর বসন্ত বের হলে এবং বেদনা, ঠাণ্ডা বােধ, গা জ্বালা, জ্বর প্রভৃতি উপসর্গ দেখা দিলে—থুজা ১x-৩।
  • গুটি পাকবার মুখে যদি জ্বর হয় তখন দিতে হবে—রাসটক্স ৬।
  • গুটি বের হবার পর গুটির চারপাশ ফুলে উঠলে, চুলকানি শুরু হলে—এপিল মেল ৩x|
  • পুঁজ হবার পর জ্বরাতিসার লক্ষণ দৃষ্ট হলে—আর্সেনিক ৬-৩০।
  • চমকে চমকে ওঠা, পিঠে বেদনা প্রভৃতি লক্ষণে—বেলেডােনা ৬।
  • বেলেডােনায় যদি কাজ না হয় তাহলে স্ট্রামােনিয়াম ৬।
  • রক্তস্রাব হলে হ্যামামেলিস ২x 

আসল বসন্ত (SMALL Pox) এর হোমিওপ্যাথিক প্রতিষেধক:

রােগীকে টীকা না দিয়ে ভ্যাক্সিনিম ৬x চূর্ণ খাওয়ালে টীকা দেবার কাজ হয়। রােগীকে খাওয়াতে হবে ১ গ্ৰেণ মাত্র। টীকা দিলে যে কুফল হয় এতে সে ভয় থাকে না। পাড়ায় যদি বসন্ত হতে শুরু হয়েছে দেখা যায় তাহলে নীচের ওষুধগুলির যে-কোনাে একটি সপ্তায় ২ বার সেবন করলে আক্রান্ত হবার ভয় থাকে না। ওষুধগুলি হলাে—ভ্যাক্সিনিমাম ৩০, ভেরিওলিনাম ৩০, ম্যালেড্রিনাম ৩০। 

আসল বসন্ত (SMALL Pox) এর আনুষঙ্গিক চিকিৎসা:

বসন্তের গুটি শুকোতে আরম্ভ করলেই এক টুকরাে ন্যাকড়া বা তুলাে গরম জলে ভিজিয়ে গা মুছিয়ে দেওয়া দরকার। এতে চুলকানি একটু কম হবে। বসন্ত রােগের পুঁজের বিষ খুব মারাত্মক। চোখে লাগলে চোখ। নষ্ট হয়ে যেতে পারে। সেজন্য রােগী যাতে গুটি না চুলকায় সেদিকে নজর রাখতে হবে। রােগীর আঙুল ন্যাকড়া বা পটি দিয়ে বেঁধে দিলে ভালাে হয়। বসন্ত অবস্থায় নিম ও বেগুন খাওয়া সম্পূর্ণভাবে নিষেধ। মাছ-মাংসও খাওয়া চলবে না। সুপক্ক ফল, এরারুট, সাবু, বালি প্রভৃতি বসন্ত রােগীর পক্ষে সুপথ্য। রােগীকে সব সময় মশারির মধ্যে রাখতে হবে। রােগীর ঘরে যেন আলাে ও বাতাস প্রচুর পরিমাণে প্রবেশ করে। মশা ও মাছির উৎপাত কমানাের ব্যবস্থা করতে হবে। রােগীর সেবা করার জন্য কাছাকাছি একজনকে সব সময় থাকতে হবে। সেবাকারীই রােগীর প্রয়ােজনীয় জিনিস তার হাতের কাছে যােগাবে। রােগ সেরে গেলে রােগীর ব্যবহৃত পােশাক-পরিচ্ছদ পুড়িয়ে ফেলতে হবে। যে-সব জিনিস পােড়ানাে সম্ভব নয় সেগুলিকে ফুটন্ত জলে বহুক্ষণ চুবিয়ে রেখে ভালাে করে ধুয়ে কড়া রােদে শুকিয়ে নিতে হবে।

শেয়ার করে ভালবাসা দেখান

Leave a Reply