প্রদর বা লিকোরিয়া রোগের কারণ ও লক্ষণ কি

আপনি জানেন কি? প্রদর বা লিকোরিয়া (Leucorrhoea) রোগের কেন হয়, এর কারণ ও লক্ষণ কি কি?

স্ত্রীরোগের মধ্যে সবচেয়ে কমন ও যা প্রায় মহিলাদের মধ্যে কোন না কোন সময় দেখা যায় এই প্রদর বা লিকোরিয়া (Leucorrhoea) রোগটি।

তাই এ বিষয়ে জেনে রাখা প্রত্যেক নর-নারীর জন্য উপকারী।

প্রদর বা লিকোরিয়া (Leucorrhoea) কি?

সস্তান প্রসব পথে এক প্রকার ঘন সাদা স্রাব হওয়াকে প্রদর বা লিকোরিয়া (Leucorrhoea) বলে। ইহা দীর্ঘদিন ধরিয়া হইতে পারে। ইহা কোন রোগ নহে, একটি উপসর্গ মাত্র। পূর্ণ যৌবনে উপনীত হইবার পূর্বে ভ্যাজাইনা ও সারভিক্সে অধিক রক্ত সরবরাহ হইলে ভ্যাজাইনার সিকরেশন অত্যধিক বৃদ্ধি পায় । 

প্রদর বা লিকোরিয়া হওয়ার কারণঃ 

লিকোরিয়া হওয়ার কারণ একাধিক। লিকোরিয়া বেশী হওয়ার একটি বড় ও প্রধান কারণ হইল ইনফেকশন। জরায়ু শরীরের “ওপেন অরগ্যানগুলির মধ্যে একটি, তাই সেখানে ইনফেকশন হওয়ার সম্ভাবনা সব সময়ই থাকিয়া যায়। পায়ুদেশ থেকে জীবাণু আসিয়া খুব সহজেই ইনফেকশন ঘটাইতে পারে। ট্রাইকোমোনা এবং মোনিলিয়া এই দুইটি ইনফেকশন যৌন রোগের জীবাণু বহনকারী পুরুষের মাধ্যমে স্ত্রীলোকদের মধ্যে সংক্রামিত হয় । মোনিলিয়ার ক্ষেত্রে জরায়ুতে চুলকানি হয় এবং তৎসঙ্গে ব্যথা থাকে। ঘন হলদের মত সাব হয়। ট্রাইকোমােনার ক্ষেত্রে জরায়তে দালালে জরায়ু একটু ফুলিয়া যায়, লালচে হইয়া যায়, ফেনাটে দুর্গন্ধয়ত পরিচ্ছনতার অভাব ও উপযুক্ত পরিবেশের অভাব তে প্রদরের একতি মেয়েরা মাসিকের সময় যে প্যাড ব্যবহার করেন সেই প্যাড় দীর্ঘ নয়ত থাকিলেও ইনফেকশন হইতে পারে। জন্ম নিরােধক বড়ি হইতে প্রদর বা লিকোরিয়া হইতে পারে।এখন মহিলাদের যে ঋতুস্রাব সেটা এই ইনফেকশনের হাত থেকে জরায়ুকে রক্ষা করে। জরায়ুতে যে এ্যাসিডিটি থাকে তাহাতে সাধারণ ব্যাকটেরিয়া বা ফাংগাস বাঁচিতে পারে না। হইলে এবং বাচ্চা হওয়ার পর পারে না। ঋতুস্রাবের পরবর্তী পর্যায়, গর্ভপাত করানাে হইলে এবং বাচ্চা হইবার পর ইনফেকশন হইবার সম্ভাবনা বেশী থাকে।

রক্ত ভ্যাজাইনাল এসিডের জীবাণু প্রতিরােধ শক্তি কমিয়া দেয়। আবরশন বা গর্ভপাত হইবার কিছুদিন পর ডিসচার্জ হইতে পারে সেটাও এই অ্যাসিডিটি কমিয়ে দেয় ফলে জীবাণু সংক্রমণ হয়। মেনােপজ হওয়ার পরও কিছু কিছু মহিলাদের লিকোরিয়া- হয়। এখানে ব্যাপার হইল তাহাদের শরীরের ইস্ট্রোজেন কমিয়া যায়। জরায়ু কোষগুলি ইস্টোজেন নির্ভরশীল । ইষ্টোজেন জীবাণু প্রতিরােধক শক্তি হিসাবে কাজ করে। 

ইনফেকশন প্রসঙ্গে একটি মূল্যবান কথা হইল যে, যৌন সংসর্গ ব্যতীত অনেক কোনও কারণে ইনফেকশন হইলে সেই মহিলার থেকে তাহার স্বামীর যৌনাঙ্গে ইনফেকশন হইতে পারে। তবে ইহার বড় একটা প্রকাশ লাভ হয় না। বড়জোর একটা চুলকানী বা র‌্যাশ হিসাবে প্রকাশ পায়। কিন্তু চিকিৎসার মাধ্যমে স্ত্রীর ইনফেকশন ভাল হইয়া গেলেও পুনরায় তার স্বামীর মাধ্যমে ইনফেকশন হইতে পারে। কেননা স্ত্রীর চিকিৎসার সময় স্বামীর কোন চিকিৎসা হয়নি। আলচার ইত্যাদি থেকে সারভিজে যে ক্ষয় হয়, তাহার কারণেও লিকোরিয়া হয়। সারভাইক্যাল ক্যান্সারও প্রথমে লিকোরিয়া। হিসাবে দেখা দিতে পারে। মহিলাদের ক্ষেত্রে ব্রেষ্ট ক্যান্সারের পরেই সবচেয়ে বেশী যে ক্যান্সার হয় সেটা হল ক্যান্সার অব দি সারভিক্স । প্রথমে সেটা লিকোরিয়া হিসাবে থাকে, পরে স্রাবের সঙ্গে রক্ত বাহির হয়। 

সহবাসের পর যে সব মহিলাদের লালচে বা গােলাপী স্রাব হয়, তাহাদের খুব শীঘ্রই ডাক্তারের নিকট যাওয়া উচিত। এমনকি দুটি পিরিয়ডের মাঝখানে যদি পিংক ডিসচার্জ হয়, তাহা হইলেও দ্রুত ডাক্তার দেখানাে উচিত। পিরিয়ড আটাশ দিনের হইলে মাঝামাঝি সময়ের স্রাব হয় পানির মত পাতলা। ইহাতে ভয় পাবার কিছুই নাই। অনেক ক্ষেত্রে মানসিক রােগ হইতেও লিকোরিয়া হইতে পারে। তণে সারভাইক্যাল ইরােশনই হইল প্রধান কারণ। সংক্রমণ এড়াইবার আর একটি উপায় হইল সব সময় পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন থাকা। 

পরিশেষে যে সকল মহিলার ঋতুস্রাব বেশী হয়, তাহাদের লিকোরিয় সম্ভাবনা বেশী। অবশ্য সাব বেশী হইলেও ভয়ের কিছুই নাই। শুধু খেয়াল রা জাবের রঙ অন্য রকম হইতেছে কিনা বা জরায়ুতে কোন জ্বালা, ব্যথা ভাব ইত্যাদি আছে কিনা।

 সংক্ষিপ্ত আকারে প্রদর বা লিকোরিয়া লক্ষণঃ 

১। জরায়ু হইতে অনিয়মিতভাবে সাদা সাব বাহির হইতে থা

২। মাঝে মাঝে তাহার সঙ্গে লালচে স্রাব বা এক ফোটা রক্ত বাহির হয়। 

৩। Infection থাকিলে তাহার জন্য যোনি চুলকাইতে পারে।

৪। হজমের গোলমাল, অম্বল প্রভৃতি থাকিতে পারে।

৫। মাথা ধরা, মাথা ব্যথা, কোষ্ঠকাঠিন্য প্রভৃতি থাকিতে পারে । 

প্রদর বা লিকোরিয়া কেন হয় ?

১। শরীরে যক্ষ্মা, রক্তহীনতা বা ভিটামিনের অভাবে প্রদর হইতে পারে।

২। বৃদ্ধ বয়সে শরীরের চামড়া শুকাইয়া যায় ও কোচকাইয়া যায় । সেই সময় জরায়ু শুকাইয়া গেলে অন্যান্য জীবাণু দ্বারা আক্রান্ত হইয়া প্রদর হইতে পারে। 

৩। জরায়ু নীচে নামিয়া যাওয়ায় রিং পেশারীর ব্যবহারে উক্ত স্থানে ইরিটেশন সৃষ্টি হওয়ায় প্রদর হয়। 

৪। সাধারণতঃ ট্রাইকোমোনাস ভেজাইনালিশ নামক এক প্রকার প্রটোজোয়া দ্বারা ইহা হয়। 

৫। অন্যান্য বহুবিধ কারণেও ইহা হইতে পারে, তন্মধ্যে গনোকক্কাস বিশেষ উল্লেখযোগ্য ।

শেয়ার করে ভালবাসা দেখান

2 Replies to “প্রদর বা লিকোরিয়া রোগের কারণ ও লক্ষণ কি”

Leave a Reply