হোমিওপ্যাথি চিকিৎসা ইতিহাস

হোমিওপ্যাথি চিকিৎসা ইতিহাস

হােমিওপ্যাথি চিকিৎসা আবিষ্কারের পটভূমি, ডাঃ হ্যানিম্যান তৎকালীন জার্মান দেশের একজন সফল এলােপ্যাথিক চিকিৎসক ছিলেন। তিনি প্রচলিত চিকিৎসার কুফল ও অসাড়তা উপলব্ধি করেন। তিনি দেখিলেন রােগী ভাল হয়ে আবার একই রােগ নিয়ে ফিরে আসে বা পরবর্তীতে পূর্বের রােগের সঙ্গে আরাে কতগুলি নূতন রােগ যােগ হয়ে অসাধ্য ও দুঃসাধ্য রােগের সৃষ্টি হয়, যা সাধারণতঃ আরােগ্য করা যায় না ।

তিনি বলেন যে, তার সময় পর্যন্ত যত লােক অনাহারে বা দুর্ভিক্ষে মারা গেছে, এর চেয়ে দশগুণ লােকের মৃত্যু হয়েছে অচিকিৎসা ও কুচিকিৎসার ফলে। তিনি উপলব্ধি করিলেন। প্রচলিত চিকিৎসা ব্যবস্থায় রােগীর উপকারের চেয়ে অপকারই বেশী।  তিনি এলােপ্যাথিক চিকিৎসায় বৃতশ্রদ্ধ হয়ে চিকিৎসা ব্যবসা ত্যাগ করেন এবং অনুবাদ কাজে আত্মনিয়ােগ করে সংসারের ব্যয়ভার চালাতে থাকেন।

১৭৯০ সালে ডাঃ উইলিয়াম কালেনের মেটেরিয়া মেডিকা অনুবাদকালে ডাঃ হ্যানিম্যান অবগত হন যে, সিঙ্কোনা গাছের বাকলের রস পান করলে কম্পনযুক্ত জ্বর ভাল হয় এবং সুস্থদেহে বৃহৎ মাত্রায় | পান করিলে কম্প জ্বরের অনুরূপ লক্ষণ সৃষ্টি হয়। পরীক্ষার জন্য হ্যানিম্যান কয়েকদিন যাবত টাটকা সিঙ্কোনার চার ড্রাম রস দিনে দুবার সেবন করেন। তার হাত-পায়ের আঙ্গুলের অগ্রভাগ প্রথমে ঠান্ডা হয়ে আসে, অবসন্ন ও নিদ্রালু হয়ে পড়েন। হৃৎপিন্ড দপদপ করতে শুরু করে। নাড়ী শক্ত ও দ্রুত হয়। সর্বাঙ্গে | অবসাদ, মাথার দপদপানি, পিপাসা, সংক্ষেপে সবিরাম জ্বরের সাথে। সংশ্লিষ্ট সকল লক্ষণ একের পর এক প্রকাশ পায়। ঔষধ বন্ধ করার পর তিনি আবার তার পূর্বের স্বাস্থ্য ফিরে পান।

তিনি বার বার ঔষধটি নিজ দেহে পরীক্ষা করতে লাগলেন এবং দেখিলেন অধিক মাত্রায় সেবন করিলে কম্পজ্বর হয় আবার সূক্ষ্মমাত্রায়। সেবন করিলে ধীরে ধীরে যাদুমন্ত্রের মত সমস্ত কষ্ট দূর হয়ে যায়।

এইভাবে তিনি আর্নিকা, বেলেডােনা ব্রাইয়াে, একোনাইট প্রভৃতি | পরীক্ষা করিয়া দেখিলেন, যে ঔষধের বৃহৎ মাত্রায় কষ্টকর উপসর্গের সৃষ্টি হয় সেই ঔষধের ক্ষুদ্র মাত্রায় উপসর্গ সমূহ দূর হয়ে যায়।

দীর্ঘ ছয় বছর বিভিন্নভাবে পরীক্ষা নিরীক্ষার পর ১৭৯৬ সালে তিনি ঘােষণা করেন, যে ঔষধ বৃহৎ মাত্রায় সুস্থদেহে যে ধরনের রােগ সৃষ্টি করতে পারে, সেই ধরনের প্রাকৃতিক পীড়ায় উক্ত ঔষধের ক্ষত আরােগ্য করতে সক্ষম।

হ্যানিম্যানের পূর্বে হিপােক্রেটিস সহ বহু চিকিৎসক সদশ চিকিৎসার কথা বলেছেন, কিন্তু একেই আরােগ্যের একমাত্র নিয়ম হিসেবে কেহই উল্লেখ করেননি। তাই হ্যানিম্যান হোমিওপ্যাথি চিকিৎসা বা সদৃশ চিকিৎসার পুনঃআবিষ্কারক (Discoverer), কিন্তু সম্পূর্ণ আবিষ্কারক বা উদ্ভাবক (Inventer) নন।

তথ্যসুত্রঃ

ডাঃ হুমায়ুন বিশ্বাস

শেয়ার করে ভালবাসা দেখান

Leave a Reply